এম. রহমান রনি :
বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থী ও পরিচিত ফ্যামিলির এখন মূল সমস্যা বাসা ভাড়া। অনেকে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। অনেকে টিকতে না পেরে ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমাকে অনেকে ফোন দিচ্ছে পরামর্শের জন্য। টিউশনি নাই তাই চলার মতো অবস্থাও নাই। আমার অফিসে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের খাট-চৌকি, টেবিল ও জিনিসপত্র রেখে গেছেন। তাদের যে কি আকুতি? তারা অবশ্য কেউ জবির না।
মেহেরপুরের মেয়ে শুধু চাকুরীর পড়াশুনার জন্য এসেছেন ঢাকায়। টিউশনি করিয়ে চলতো। এখন টিউশনিও নাই তাই বাসা ভাড়াও দিতে পারছে না। বাসা ছেড়ে দিয়েছে অন্য সব রুমমেট অসহায় হয়ে মালামাল আমার অফিসে রাখার জন্য রিকোয়েস্ট করলেন। আমি রাখতে চাইলে মালামাল নিয়ে আসলো বিপত্তি জানালো আমার বিল্ডিং মালিক। পরে অনেক রিকোয়েস্ট করে রাখার ব্যবস্থা হল।
কবি নজরুল কলেজের তিনজন শিক্ষার্থী থাকে একটি রুম ভাড়া নিয়ে। তিন মাসের ভাড়ার টাকা এডভান্স দেয়া। তিন মাস হয়ে গেছে বাড়িরওয়ালাকে ভাড়া কমানোর জন্য বলায় বাড়িরওয়ালা বললেন, সরকার এই মাসের ৩০তারিখের মধ্যে বিদ্যুৎ বিল,গ্যাসবিল, পানির বিল পরিশোধ করতে বলেছে! আমি কি করবো? আমার কিছু করার নাই। হয় টাকা দেন নয়তো মালামাল নিয়ে যান। আমারে ঝামেলায় ফেলবেন না।
এক ব্যবসায়ী বড় ভাই নক করলেন। তার মাত্র ৯হাজার টাকার জন্য লক্ষাধিক টাকার মালামাল সেইদিন ই নিয়ে নেবে বাড়িরওয়ালা। বাড়িরওয়ালার এক কথা হয় তিন মাসের ভাড়া দিয়ে মালামাল নিয়ে যাও নয়তো ১জুনের পর আর আসবে না আমার বাড়ির আসেপাশে।
এক পুরানো কাপড় ব্যবসায়ীর আকুতি ব্যবসা মনে হয় আর করতে পারলাম না। ভাড়া বাকী থাকায় বাড়িরওয়ালা বিচার ডেকেছে। পাশের আরেক ব্যবসায়ী বেশি ভাড়া ও বেশি এডভান্স দিতে চায়। কিন্তু দোকান না থাকলে দুটি সমস্যা তিনি যাদের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা পান তা আর আদায় হবে না। আর যারা তার কাছে টাকা পায় বিচারের মধ্যে তাদের টাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তার আকুতি কোন বন্ধু বান্ধব সহযোগীতা করছে না। অনেকে ফোন ধরা বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে না। এনজিও থেকেও ঋণ বন্ধ। কিন্তু তারা কিস্তির জন্য বাসায় এসে বসে থাকে। কিস্তি না নিয়ে যাবে না।
একজন এনজিও কর্মকর্তার সাথে কথা হল তিনি বললেন আমাদের ঋণ দেয়া বন্ধ। শুধু ছোট পরিশোধ করা ঋণগুলো দেয়া হচ্ছে পুনরায়। আর আদায়ের ব্যাপার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে,’ বুঝিয়ে শতভাগ কালেকশন করতে হবে।’ যদিও সরকারি নির্দেশনা ৩০জুন পর্যন্ত কিস্তি আদায়ে কড়াকড়ি করা যাবে না। কিন্তু প্রতিকার কোথায় কেউ জানে না।
এভাবে চলতে থাকলে অনেক মানুষ দেওলিয়া হয়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সরকারি হাজার হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার কি হল? যাচ্ছে কোথায়? কে পাবে? অর্থ সাহায্য কারা পাচ্ছে ? ঋণ কারা পাচ্ছে? উত্তর কেউ ই জানে না।
লেখক :
শিক্ষা উদ্যোক্তা ও
প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়