আলাের দেশ ডেস্ক :

২০২১ সালের ২৩ আগস্ট উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের একটি কোচিং সেন্টারে আত্মহত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিজবাহ উল আজিম।

এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর বাড্ডার একটি ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়লে ঘটনাস্থলেই মারা যান ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অষ্টম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী চন্দন পার্সি।

এছাড়া ৩০ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জে বাড়ির পাশে গাছের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন অমিতোষ হালদার। একই বছর ২০ অক্টোবর আত্মহত্যা করেন ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া মেহজাবিন স্বর্ণা। তাদের স্বজনদের দাবি ছিল, তারা মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছে।

একই বছরের ২২ ডিসেম্বর হাতিরঝিলের এক বাসা থেকে সদ্য ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মেহেবুল্লাহ তৌসিফ এর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মানসিক হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে আত্মহত্যার করে সে।

২০২১ সালে চারিদিকে যখন এভাবেই বিষবাস্পের মতো আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছিল, তখনি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় স্থাপন করা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সেলিং সেন্টার।

২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত দেড় বছরে কাউন্সিলিং সেন্টার স্থাপনের পর সেবা দিয়েছে সাত শতাধিক শিক্ষার্থীকে। কাউন্সিলিং সেন্টারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হলো এই দেড় বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীই আত্মহত্যার মতো বিপথে পা বাড়ায়নি। কাউন্সিলিং সেন্টারের আহ্বায়ক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবার কাছে এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।

দেড় বছরের এই পথচলা নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিলিং সেন্টারের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, কাউন্সিলিং সেন্টারে সাত শতাধিক শিক্ষার্থীকে সেবা দেয়া হয়েছে। এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত কাউন্সিলর হলে ভালো হবে। আমরা মৌখিকভাবে ভিসি-রেজিস্ট্রার বরাবর কাউন্সিলিং পদের জন্য জানিয়েছি। এখন যারা কাউন্সিলিং সেবা দিচ্ছেন তারাও কম যোগ্যতা সম্পন্ন নয়। বর্তমানে যে শিক্ষার্থীরা কাউন্সিলিং সেবা দিচ্ছেন তারা ঢাকা মেডিকেল, স্যার সলিমুল্যাহ মেডিকেলসহ অন্যান্য হাসপাতাল থেকে সঠিক ট্রেনিংপ্রাপ্ত হয়েই এখানে সেবা দিচ্ছেন। তাদের কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য আমিসহ মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ রয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি প্রেমঘটিত বিষয়ে মারাত্মকভাবে ধোকা খেয়ে ভেঙে পড়েছিলাম। চারদিকে অন্ধকার লাগছিল সব। একসময় মনে হয়েছিল জীবন তুচ্ছ। এরপর এক বন্ধুর মাধ্যমে কাউন্সিলিং সেন্টারে আসা। এখানে এসে আমি আমার সমস্যাটি তুলে ধরি এবং প্রায় ১২টি সেশন নিয়ে আমার মানসিক সমস্যা থেকে বের হতে পেরেছি। আসলে ধৈর্য ধরলে ও বিশ্বাস করলে সমস্যা থেকে বের হওয়া যায়। ধৈর্য সহকারে সেবা নেয়ার জন্য সবার কাছে আহ্বান রইলো।

সেবা প্রদানকারী ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রমা বলেন, কাউন্সিলিং সেবার মূল কথাই হলো এখানে উপদেশ দেয়া হয় না। এখানে সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীর আসল সমস্যাটি ধৈর্য সহকারে ১২ থেকে ১৩টি সেশনে খুঁজে বের করে একটা সুন্দর জীবন উপহার দেয়া হয়। আমি নিজে ৫/৭ জন শিক্ষার্থীকে সুপারভিশন দিয়েছিলাম। তারা সবাই এখন মানসিকভাবে সুস্থ।

উল্লেখ্য, কাউন্সিলিং সেন্টারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সমস্যা শোনার জন্য প্রতিটি বিভাগে দু’জন ছাত্র উপদেষ্টা ইতোমধ্যে নিয়োগ দিয়েছে প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *