আলোর দেশ, ঢাকা :
গত বছরের জুন মাসে অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ করে গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী শারমিন আকতার মিম। খেটে খাওয়া সামান্য আয়ের বাবার পক্ষে পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ছেড়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন শারমিন ।
এমন সংবাদ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে, মেয়েটির পরিবারের খোজঁ-খবর নিতে উঠে পরে লাগেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ১নং সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইব্রাহীম ফরাজী। তারপর তিনিমেয়েটির পরিবারের খোজখবর নেন। পরিবারের সাথে কথা বলেন। দেখেন তার পরিবারটি সত্যিই অতি নিম্ন আয়ের অস্বচ্ছল পরিবার। তারপর তিনি দায়িত্ব নিয়ে মিমকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। প্রয়োজনীয় আর্থিক অনুদান দেন। ভাল মানের ২টি টিওশনি ধরিয়ে দেন এবং ডির্পাটমেন্টে সকল ফি মওকুফ করার ব্যাবস্থা করেন। এখন পড়াশুনা চালিয়ে যেতে মিমকে কোন সংকটের সম্মুক্ষীন হতে হয়না। তার জন্য নিশ্চিন্তে পাঠে মনোযোগী মিম।
এবিষয়ে শারমিন আকতার মিম ‘আলোর দেশ’ কে বলেন, “আমার দূর্দিনে অনেকেই আমার পাশে দাড়াবেন বলে কথা দিয়েছেন। কিন্ত পরে আর কেউ আমার খবর নেননি। কিন্তু ইব্রাহীম ফরাজী ভাই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমার খোজঁ-খবর নিচ্ছেন। আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। আমি অনেক কৃতজ্ঞ। সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে আমি আমার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারি।”
এবিষয়ে ইব্রাহীম ফরাজী ‘আলোর দেশ’ কে বলেন, “মানুষ মানুষেরই জন্য। একটি মেয়ে টাকার অভাবে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন থেকে বঞ্চিত হবে, এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না। আমি বিষয়টি শোনার সাথে সাথে মেয়েটির পরিবারের খোজখবর নিয়ে দেখি তারা সত্যিই অসহায়। আমি আমার যায়গা হতে মেয়েটির পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি এবং যেকোন সহযোগিতায় তার পাশে থাকব।” তিনি আরও বলেন, “কোন প্রচারের জন্য নয় বরং মানবিকতার দিক থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে আমার যায়গা হতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।”
জানা যায়, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৩৯৬ নম্বরে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে ভর্তি হন শারমিন আকতার মিম। ১০ জানুয়ারি থেকে প্রথম সেমিস্টারের ক্লাসও শুরু করেন তিনি। আবাসিক হল না থাকায় মেসে থেকে পড়াশোনা চালাতে থাকেন । কিন্তু পুরান ঢাকায় প্রতি মাসে থাকা-খাওয়া বাবদ প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ গুনতে হয়। যেটা দরিদ্র রিকশাচালক বাবার পক্ষে জোগান দেয়া অসম্ভব। তাই গত এক মাস ধরে বাড়িতেই বসে আছেন মিম।
শারমিন আক্তার মিম নওগাঁর মান্দা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘাটকৈর গ্রামের রিকশাচালক জামাল হোসেন ও গৃহিণী মা মোরশেদা খাতুনের বড় মেয়ে। ছোট বোন শাহারা আফরিন মান্দা এসসি পাইলট স্কুল ও কলেজে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া চার শতাংশের জমির মালিক জামাল হোসেন। সেখানেই টিন ও বুনের বেড়া দিয়ে তৈরি একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস চারজনের। শারমিন আক্তার মিম ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। ২০১২ মান্দা এসসি পাইলট স্কুল ও কলেজ থেকে সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে বৃত্তি পান। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৫ সালে মাধ্যমিকে ফের জিপিএ-৫ এবং ২০১৭ সালের নওগাঁ সরকারি বিএমসি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ- ৪.২৫ অর্জন করেন।
হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা মিম এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এতদিন পড়াশোনা চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এখন উচ্চশিক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও টাকার অভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে। সমাজের দয়ালু মানুষগুলো সহযোগিতা করলে তার আগামীর সপ্ন পুরন মসৃন হবে।