নাফিসা মালিয়াত এশামনি
পৃথিবীটা আজ বেশ বিপদাপন্ন। আমরা জানিনা আমাদের আগামীটা কেমন হবে। শুধু জানি আমাদের আগামী দিনের বর্তিকা গুলো বেশ নিভু নিভু। শিশুরা আজ নিজের স্বপ্ন গুলোতে বাঁধা অনুভব করছে। খুব সাধারণ দিনের মাঝেই একদিন ছিল যখন আমাদের দেশের কোমল মতি শিশুরা এক নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হল, এবং সেই শব্দটি হল লকডাউন। এই শব্দটি হয়তো আমাদের কাছে এক নতুন শব্দ যা শিশুদের এক অন্য আঙ্গিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করলো।
ঢাকার স্কুলগামী শিশুদের সাথে একদিন অনলাইনে গল্পের আসরে জানতে পারলাম তাদের নানান কথা। খেলাঘরের ক্ষুদে শিক্ষার্থী আফসা হাবীব আমাদের জানান আগামী কাল বান্ধবীর জন্মদিন তাই অনেক গুলো উপহার বানিয়েছিল কিন্তু এই লকডাউনের কারণে সে স্কুলে যেতে পারছেনা। কথা বলতে বলতেই ফুঁপিয়ে উঠে ছোট্ট শিশুটি। টেলিভিশনে শুধু মৃত্যু হার গণনায় গনিতের গণনা তারা ভুলেই যাচ্ছে। তাদের এতো দুঃখ কেন? জবাবে কিছু বলতে পারলাম না আমরা কেউই। কেননা এই মহামারি কবে শেষ হবে আমরা কেউ জানিনা। আমরা জানিনা কবে বাংলাদেশ আবার বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবে। আমরা শুধু জানি আমরা বেঁচে আছি বাংলাদেশের সেই মাটিতে যে মাটি ভিজেছিল একাত্তরের লাল রঙে এবং এই বর্তমান তেমনটি করেই ভিজে চলেছে স্বজন হারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে শহীদ হওয়া জনগণের চোখ।
আমরা এই সময় ঠিক কতটা অসহায় তা জানাচ্ছিলেন আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি বোর্ড এর বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী রাফসান মাহবুব। তার ভাষ্যমতে কোভিড-১৯ মানে মা কে ভিডিও কলে দেখা। আর বাবাকে পিপিই পরিহিত অবস্থায়। তার কথা শুনে মনে পরে গেলো ১৯৭১ সালের স্মৃতি চারণ নিয়ে লেখা জাহানারা ইমামের “একাত্তরের দিন গুলো” যেখানে এক একটি যোদ্ধা বৃষ্টিতে ভিজে যুদ্ধ করেছেন বিশাল রেইনকোট গায়ে। এই পিপিই, এই রাফসান, এই ভেজা চোখ এই সবই কি আমাদের একাত্তরের সেই বার্তা দিতে এসেছে? আজকের শিশুরা যুদ্ধ দেখেনি কে বলেছে? আজকের শিশুরা মহামারির যুদ্ধ দেখেছে।
যে যুদ্ধ যুগে যুগে কেউ দেখেনি। বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা ছিল ২০২১ হবে ডিজিটাল, কোভিড-১৯ এই বাংলাদেশ কে খুব সহজ সাবলীল ভাবেই ডিজিটাল করে দিল। শিশুরা এখন ক্লাস করে অনলাইনে। টেলিভিশনে এখন মহামারির খবর নয় বরং শ্রেণিকাজের হিসাব রাখছে তারা। তবে আসলেই কি আমাদের দেশের শিশুদের নিয়ে এমন স্বপ্নই দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু? বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিতে দেখা শিশুরা আজ আকাশ দেখতে চায়। দেখতে পায়। তবে ঘরের জানালা থেকে ক্ষুদ্র আকাশের বিশালতা তারা অনুভব করেনা।
আজকের শিশুরা আগামীটা কিভাবে গড়বে? প্রশ্ন নয় আক্ষেপ হয়! শিশুদের বেড়ে অথার ক্ষুদ্র সেই স্বপ্ন একেকজন মানুষের বেঁচে থাকার অক্সিজেনের মতই। প্রতিটি শিশু বাংলাদেশের গল্প গুলো স্বপ্ন চোখে দেখবে যখন কোভিড-১৯ এর ভাঙা চাঁদটা খসে পড়বে।