আফিফুর রহমান
বাংলাদেশের সেই শিশুটির আর্তনাদ শুনি যার বয়স ১২ তে বিয়ে হবে। খুব হতাশার হলেও এটাই সত্যি সময়ের সাথে বদলে যাচ্ছে আমাদের সকল কিছু। আমি বাংলাদেশের সেই শিশুটির কথা বলছি যে গত বছর সৃজনশীল মেধা অন্বেষণে পুরস্কৃত হয়েও এইবার বিদ্যালয় বন্ধের কারণে বিয়ের আসরে বসেছে। একটা স্মার্টফোন কি? বা কিভাবে অনলাইনে ক্লাস করতে হয় এখনো জানেনা ছোট্ট মেয়েটি। গ্রামের অভাবি ঘরের এই মেয়েটা একদিন আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখেছিলো কিন্তু আজ বাল্যবিবাহের বিশাল ঢেউ মহামারীর চেয়েও বেশি প্রকোপ ঢেলেছে তার জীবনে। গ্রামের অর্ধ আলোকিত ঘরে কিংবা অর্থ অভাবীর দুয়ারে দু’ মুঠো ভরে ভাত জুটে না আর সেখানে তার আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন কিভাবে পূর্ণ হবে? বলছিলাম হাসিনা বানুর গল্প। গোপালগঞ্জের ক্ষুদ্র শহরে তার জন্ম এবং বেলা ফুরতেই তাকে জানানো হয়েছে তার শুক পাখিরা সুখ কুঁড়াতে না গিয়ে যাবে অন্য ঘরে গরম উনুনে নরম হাত গুলো পোড়াতে। তার জীবনের এমন করুন সত্য সে মেনে নিতে পারছেনা। তার আশপাশের আমরা সবাই কিন্তু নিরুপায়। তার পরিবারের দায়িত্ব যেমন আমরা নিতে পারবোনা, তার বিয়ে থামানোর চেষ্টা টুকুও ব্যর্থ। আমরা সবাই কেবলই তাদের মতো কলিগুলোকে দেখছি যারা ফুল হয়ে তাক লাগানোর আগেই ঝড়ে পড়ছে! বাংলাদেশের এক আলোকিত সন্তান কিভাবে বাল্যবিবাহ এর স্বীকার হচ্ছে ভেবে বেদনা এক রাশ বেড়ে যায়। আমরা হয়তো পারি জনসচেতনতা তৈরি করতে। কিন্তু আমাদের দেশের এই হাসিনা বানুর মতো সুন্দর ফুল গুলোকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের। আমরা যদি শহরের সকলের মাঝে গ্রামীণ মানুষকে সাহায্য করার দৃষ্টান্ত তুলে ধরি তাহলে বাগানের সকল কলি একসঙ্গে ফুটে উঠবে। বাংলাদেশের নারী শক্তি জাগরণে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের সকল ডিজিটাল মাধ্যমে গণসচেতনতা ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরা চাইলেই পারি। কারণ আমরা বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের শিশুরা সকল কিছুতে পারদর্শী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় বাংলা মায়ের প্রিয় সন্তানেরা সত্যিই যেন এক একটি পতাকা ধারী হয়ে বিশ্বের বুকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে সবাইকে এই প্রত্যাশাই বাংলাদেশের সকল শ্রেণির মানুষের। তাই আসুন গলা মিলিয়ে বলি, “শিশু অধিকার আদায়ে এক চুল ও ছাড় নয়, বাল্যবিবাহ নিরসনে আর কোনও হ্যাঁ নয়! বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের সবার চিত্র আঁকে শিশু মনে। সেই শিশুরা আজ আমাদের বাংলাদেশের সোনার সন্তান। সোনার বাংলা গড়ার প্রতিজ্ঞা কেবল আমরা নয় বাংলার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শিশুরা তাদের কোমল কন্থের জাতীয় সঙ্গীতে ফুটিয়ে তুলে। বাংলাদেশ গর্বিত এই বাংলার বুকে এমন প্রতিনিধি পেয়ে যারা ভবিষ্যতের মানচিত্র খুব যতনে বুকের খাঁচায় লালন করে। শুধু শস্য সমৃদ্ধ নয় বরং আমাদের দেশ হবে ফুল কলিদের বিশাল উদ্দ্যান, যেখানে তারা ফুটে উঠবে নিজ স্বাধীনতায়, যেই বাংলায় কোনও বাল্যবিবাহের আগুনে কারো স্বপ্নের বলিদান ঘটবেনা। এটি শুধু আমার চাওয়া নয়, এটি মহান পৃথিবীর স্বাধীন মানচিত্র খচিত ১৭ কোটি ঊর্ধ্ব মানুষের প্রানের দেশে কোন এক শহরে, কোন এক চিলেকোঠায় কিংবা বারান্দায় বসে আকাশ এর তারকায় স্বপ্ন বোনা সেই কিশোরের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন!