জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :
ছোটবেলার কবিতাটি (ওরে ভোঁদড় ফিরে চা, খোকার নাচন দেখে যা) অনেকেরই মনে আছে। এই ভোঁদড় সংরক্ষণের জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল ওটার সার্ভাইভাল ফান্ড’ (IOSF)-এর সহযোগিতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ‘নেচার স্টাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাব’ এর উদ্যোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ন্তগত পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুলে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সোমবার (২৬ আগষ্ট) বেলা ১১টায় পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুলের অডিটোরিয়ামে তা অনুষ্ঠিত হয়।
ভোঁদড় কি, এদের গুরুত্ব, ভোঁদড়ের বর্তমান অবস্থা, ভোঁদড়ের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ ও এদের সংরক্ষণে করনীয় দিকসমুহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরার লক্ষে এ অনুষ্ঠানটি করা হয়। অনুষ্ঠানে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। বিদ্যালয়ে ভোঁদড় সংরক্ষণে ভবিষ্যৎ কার্যক্রম চালাতে এই অনুষ্ঠানের মধ্য থেকে ১৩ জন আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ‘ভোঁদড় দল’ গঠন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন খেলা, ভোঁদড়ের মুখোশ রং করা ও ভোঁদড় সম্পর্কিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে অনুষ্ঠানের উপস্থিত আলোচনার উপর ভিত্তি করে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অংশগ্রহণ ও কুইজ প্রতিযোগিতার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ৩ জন সেরা পারফর্মারকে পুরষ্কার প্রদান করা হয় (এরা হলেন সাত্ত্বিক সোম, তাসমিয়া ও রিতম ইসলাম)।
জানা যায়, প্রায় ৫ কোটি বছর ধরে পরিবেশের সাথে টিকে থাকা অন্যতম প্রানী ভোঁদড়।আঞ্চলিকভাবে এরা উদবিড়াল ও দাইরে নামেও পরিচিত। ভোঁদড় মানুষের মতই স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা জীবন্ত বাচ্চা দেয় ও বাচ্চারা মায়ের দুধ পান করে বড় হয়। নদ-নদী বা খাল বিলে এদের উপস্থিতি মাছের পর্যাপ্ততা, মাছের বৃদ্ধি ও মাছের প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে। অর্থাৎ ভোঁদড়ের উপস্থিতি নির্দেশ করে যে এখানে পরিবেশের ভারসাম্য বিদ্যমান।এরা খাদ্য শৃঙ্খলের সবচেয়ে উচুঁতে অবস্থান করে। জীবিকা নির্বাহেও ভোঁদড় সহায়ক ভুমিকা রাখে। যেমন দক্ষিণাঞ্চলে জেলেরা ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ ধরে। ভোঁদড় বিলুপ্ত হয়ে গেলে জলাশয়ের পরিবেশ কিংবা বাস্তুতন্ত্র বিপর্যয়ের মুখে পড়বে ও পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শ্রীমান দিলীপ কুমার দাশ, ওয়াল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির প্রাক্তন আউটরিচ কো-অর্ডিনেটর ফারহানা আখতার, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বন্যপ্রাণী শাখার স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী কামরুন নাহার জেনী এ অনুষ্ঠানে মূল আলোচক ও উপস্থাপকের ভূমিকা পালন করেন। পোগোজ স্কুলকে ভোঁদড় বান্ধব বিদ্যালয় ঘোষণা দিয়ে সহকারী অধ্যাপক শ্রীমান দিলীপ কুমার দাশ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনির হোসেনের হাতে সন্মাননা স্নারক তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।