স্টাফ রিপোর্টার :
চলমান বৈশ্বিক সংকট ও কভিড-১৯ এর সংক্রামণে যখন থমথমে সমগ্র দেশ, তেমনি একটি সংকটময় সময়ে মানুষের পাশে দাড়িয়েছে সতীর্থ ৯৭। ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলার সদর থানার অন্তর্গত ঐতিহাসিক সুলতানপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এর এসএসসি ৯৭ ব্যাচের সতীর্থদের উদ্যোগে ব্রাক্ষনবাড়িয়ার তথা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে ব্রাক্ষনবাড়িয়ার সুলতানপুর থেকে শুরু করে অাশুগঞ্জ পর্যন্ত, ঐদিকে শহরের টি এ রোড,কোর্ট রোড,মৌলভীপাড়া ও অন্যান্য মহল্লায় রিক্সাওয়ালা,সিএনজি ড্রাইভার, দিনমজুর, টোকাই ও পথশিশুদের মাঝে করোনায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও করোনা সুরক্ষা সামগ্রী বিনানূল্যে বিতরন করেন। এছাড়া ঢাকার খিলগাঁও, শাজাহানপুর,গোড়ান,বনশ্রী,বাসাবো,সবুজবাগ,তিলপাড়া,মেরাদিয়া ও মাদারটেক এলাকায় এসব সুরক্ষা সামগ্রী বিতরন করেন সতীর্থ ৯৭ এর ঢাকাস্হ সদস্যরা।
তাছাড়া মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলেও সতীর্থ ৯৭ এর সদস্য শিক্ষক মোঃ সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে ৫০০ পথশিশু,রিক্সা চালক,ভ্যানচালক,সিএনজি চালক ও দিনমজুরকে একসেট করে ফেসমাস্ক,হ্যান্ড স্যানিটাইজার,হ্যাক্সিসল,একজোড়া ল্যাটেক্স হ্যান্ডগ্লাভস বিনামুল্যে বিতরন করা হয়। এতে মারাত্নক খুশি গরীব দুঃখী ও অসহায় মানুষগুলি,যারা টাকার অভাবে এসব সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এর নির্মম নীল নকশায় বাড়ানো উচ্চ দামের কারনে সহসা কিনতে পারেনা।
৫০ টাকা হলে যে কিনা এক কেজি চাল কিনতে পারে,সে চাল না কিনে কখনোই একশ টাকা দিয়ে একটা হ্যাক্সিসল কিনবেনা যেখানে তাদের দৈনিক রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে,ঘরের উনুনে অাগুন জ্বলা প্রায় বন্ধ,সেখানে হাইজিন অাইটেমের চেয়ে বেঁচে থাকাটাই তাদের কাছে মুখ্য। দরিদ্র মানুষের এমন অপারগতায় সতীর্থ ৯৭ এর মহানুভ সদস্য দলটি জনসচেতনতায় এগিয়ে এসেছেন,পাশে দাঁড়িয়েছেন অার্তের সেবায়,নিজের টাকায় কিনে দিয়েছেন হাজারো মানুষের মাঝে এসব অতি প্রয়োজনীয় হাইজিন অাইটেমস যা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কমাতে সাহায্য করতে পারে,রোধ করতে পারে হো হো করে বেড়ে চলা সংক্রমণ।
অার্ত পীড়িত এসব দুঃখী মানুষের মাঝে বিতরন কৃত অাইটেমগুলোর মাঝে ছিল- সার্জিক্যাল মাস্ক,ফিল্টার মাস্ক,হ্যান্ড স্যানিটাইজার,ডেটল সাবান,ভিনাইল হ্যান্ড গ্লাভস ইত্যাদি।এসব ৪/৫ টা অাইটেমের এক একটা সেট করে প্যাকেট করে এসব প্যাকেট দেশের কানাচে কানাচে পৌছানো হয় সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সতীর্থ ৯৭ এর প্রতিনিধি দের মাধ্যমে।
ভৈরব,নরসিংদী, পাঁচদোনা,ও মাধবদীতে সতীর্থ ৯৭ এর সদস্য মোঃ সাইফুল ইসলাম মাসুমের মাধ্যমে অসহায় ছিন্নমূল মানুষের হাতে বিনামূল্যে পৌছানো হয় এসব সুরক্ষা সামগ্রীর প্যাকেট। ৫০০ এর অধিক সংখ্যক সেট বিনামূল্যে পৌছানো হয় এখানকার পথশিশু,টোকাই,নাপিত, অটোরিক্সা চালক,ভ্যানচালক,সিএনজি চালক ও দিনমজুরদের।
চলমান লকডাউনের কারনে দেশে বিভিন্ন প্রান্তরে অাটকা পড়া সতীর্থ ৯৭ এর বন্ধুরা থেমে নেই তাদের কর্মপ্রয়াসে।নিরন্তর ছুটে চলেছেন অবিরাম উদ্যমে মানবতার এ মহান বন্ধুতুল্য একটি সার্কেল যাদের মানবতা ও নিষ্ঠার ঐক্য গগন বিস্তৃত। মানুষের কল্যানে নিজেদের বিলিয়ে দেয়া এ বন্ধুগ্রুপটি বরাবরের মতোই এবারও এগিয়ে এসেছে মানুষের পাশে।
রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি লেকের পাড়ে,লেকের ভিতরে ও বাইরে বিচরণকারী টোকাই,ভিক্ষুক,পথশিশু,রিক্সা চালক দের মাঝে পাঁচ শতাধিক সুরক্ষা সামগ্রীর সেট নিজে হেটে হেটে অসহায় মানুষগুলির মাঝে ,যাদের এসব কেনার সামর্থ্য নেই,দৃশ্যত রাস্তায় যাদের মুখে মাস্ক এর দেখা মিলেনি,তাদের মাঝে এসব সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরন করেছেন সতীর্থ ৯৭ এর সদস্য শেখ জাকিয়া রুমী।
ব্রাক্ষনবাড়িয়ার সুলতানপুর, রামরাইল,ভাদুঘর,কাউতলী,পৈরতলা,মধ্যপাড়া,ঘাটুরা,সুহিলপুর,নন্দনপুর,বিশ্বরোড এবং শহরের ভিতরে টিএ রোড,কোর্টরোড,পাওয়ার হাউজ রোড,কালাইশ্রীপাড়া,কাজীপাড়া,মেড্ডা বাসস্ট্যান্ডে অাশে পাশের এলাকা চষে বেড়িয়েছেন সতীর্থ ৯৭ এর শিব্বির অাহমেদ, সন্তোষ চৌধুরী,অাল মামুন,লাভলু চৌধুরী, বিশ্বজিৎ শীল। পর্যাপ্ত সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে জনসচেতনতা তৈরি,কমিউনিটি ট্রান্সমিশন রোধে একদল চৌকুষ দেশপ্রেমিক স্বাস্হ্যবিধি মেনে প্রত্যেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্র মোটরসাইকেলে করে এসব সুরক্ষা সামগ্রী সাধারনের মাঝে বিনামূল্যে পৌঁছান।এসব এলাকায় দুই হাজারের বেশি প্যাকেট বিতরন করা হয়।
ঢাকার খিলগাঁও, শাজাহানপুর,বাসাবো,বনশ্রী,রামপুরা,মাদারটেক,মেরাদিয়া,ত্রিমোহনী, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার সহ অাশে পাশের বিভিন্ন এলাকায় এসব সুরক্ষা সামগ্রীর মোট দুই হাজার ছিন্নমুল মানুষের মাঝে এসব করোনা সুরক্ষা সামগ্রী পৌছে দেন সতীর্থ ৯৭ এর পক্ষে এ গ্রুপের অন্যতম সংগঠক ও প্রতিনিধি মোঃ জহির উদ্দিন বাবর।
ঢাকার উত্তরা,খিলক্ষেত, নিকুঞ্জ, অাশকোনা,হাজীক্যাম্প এলাকায় প্রায় পাঁচ শতাধিক রিক্সা ও ভ্যানচালক,দিনমজুর,টোকাই ও পথশিশুদের মাঝে এসব হাইজিন ও সুরক্ষা সামগ্রী পৌছে দেন সতীর্থ ৯৭ এর অন্যতম সদস্য সবুজ অালামিন ভুইয়া।
তাছাড়া এসব উল্লেখিত জায়গা ছাড়াও যখন যেখানে মাস্ক বিহীন মানুষ দেখছে,যেখানে যাকে দেয়া প্রয়োজন মনে করেছেন,তখন সেখানেই বিলিয়ে দিয়েছেন করোনা সুরক্ষা সামগ্রী।
“দেশব্যাপী অচলাবস্থার কারনে আমরা নিজ এলাকায় একত্রিত হতে পারিনি বলে এককভাবে সম্পুর্ণ অবদান টুকু অামরা নিজ এলাকায় করতে পারিনি।তবে অামাদের চিন্তা চেতনার পরিধি নিজ এলাকাকে ছাপিয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছি অামাদের ভালবাসার হাত।গোটা বাংলাদেশ টাই অামাদের প্রিয় জন্মভূমি।অামরা সবার অার সবাই অামাদের।তাই অামাদের ভালবাসা অার সামাজিক দায়বদ্ধতা কে ছড়িয়ে দিলাম গোটা দেশে।”- বললেন সতীর্থ ৯৭ এর অন্যতম সংগঠক ও মোঃ সাইফুল ইসলাম মাসুম।
প্রায় ৭০০০ মানুষের মাঝে বিতরনকৃত এসকল ব্যয়বহুল হাইজিন অাইটেম ও করোনা সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ে ব্যয় হওয়া এ বিগ বাজেটের যোগান দিয়েছেন যে সকল মহান হ্নদয়ের উদারতান্ত্রিক ও মহানুভব অাত্নার মানুষগুলি তারা হলেন সতীর্থ ৯৭ এর প্রবাসী সদস্য মোঃ অাবু নাইম( সৌদি আরব) মোঃ রফিকুল ইসলাম (দুবাই),মোঃ তৌফিকুল ইসলাম ( সৌদি অারব),স্বদেশী বন্ধু ঢাকাস্হ ব্রাক্ষনবাড়িয়া যুব কল্যান সমিতির সেক্রেটারী মোঃ জহির উদ্দিন বাবর,শেখ জাকিয়া রুমী,সুরাইয়া অাক্তার,বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি অাবির অাহমেদ,বিশিষ্ট গার্মেন্টস একসেসরিজ ব্যবসায়ী ও মার্চেন্ডাইজার মোঃ মাসুদুর রশীদ সুমন,মার্চেন্ডাইজার মোঃ নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যাংকার মোঃ সাইফুল ইসলাম মাসুম এবং সতীর্থ ৯৭ এর সকল সদস্যবৃন্দ।
মানুষের প্রয়োজনে সাহায্য ছড়িয়ে দেয়ার কাজে কিঞ্চিৎ কুন্ঠাবোধ করেনি মানবতার এ ফেরিওয়ালারা।এত বড় ক্রাইসিসের সময়েও সতীর্থ ৯৭ এর সদস্য এ বৃহৎ কাজের নিমিত্তেমোটা অন্কের ফান্ড রাজিংয়ে অকাতরে যার যার সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়েই অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। সুরক্ষা সামগ্রীর এ কঠিন ক্রাইসিস ও দুস্পাপ্যতার সময়ে যে মানুষটি অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাদের প্রয়োজনীয় হাইজিন অাইটেম বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানী এর কাছ থেকে বহু কষ্টে বিভিন্ন টেরিটরি থেকে, কখনো যাতায়ত ব্যবস্হার এ দুস্প্রাপ্যতার মাঝেও নিজে গিয়ে সংগ্রহ করে দিয়েছেন,তিনি হলেন সতীর্থ ৯৭ এর অন্যতম সদস্য পারভেজ খান।
সার্বিক তত্বাবধান ও লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদানে ছিলেন সন্তোষ চৌধুরী,মামুন হোসেন,লাভলু খান,অাল মামুন,দিবাকর সরকার,অাল মামুন টাইগার প্রমুখ। উল্লেখ্য সতীর্থ ৯৭ দেশ ও জাতির যেকোন ক্রাইসিস লগ্নে মানুষের কল্যানে পাশে থেকেছেন অতীতেও এবং এবারও।
সতীর্থ ৯৭ এর অন্যতম সংগঠক মোঃ জহির উদ্দিন বাবর বলেন- অামাদের এ কর্মসূচী ছিল ম্যারাথন।দেশে করোনা সংক্রমনের পর থেকেই অামরা বিভিন্ন পর্বে সারা দেশে একযোগে অামাদের বিভিন্ন প্রতিনিধির মাধ্যমে অামাদের মানবসেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছ। অামাদের বন্ধুদের স্যাক্রিফাইজিং মানসিকতাই অামাদের শক্ত।