স্টাফ রিপোর্টার :
এক টাকায় ইফতার! অবাক হয়েছেন নিশ্চই। বিষয়টি তাই। মরণঘাতি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশে যখন ক্রান্তিকাল চলছে, ঠিক তখন বিভিন্ন কৌশল আবিষ্কার করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী পরোপকারী মানুষগুলো।
প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা পেরিয়ে যখন ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসে এমন সময় মাগুরা কেশব মোড়, জেলা পাড়ায় ইফতার নিয়ে একদল তরুনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর পর রিকশাচালক ও পথচারীরা দাঁড়িয়ে তাদের কাছ থেকে ইফতার কিনে নিচ্ছেন। প্রতিটি ইফতার প্যাকেটের জন্য ক্রেতাকে পরিশোধ করতে হচ্ছে এক টাকা।
রমজানের শুরু থেকে মাগুরা শহরে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এ কার্যক্রম শুরু করেছে শহরের একদল তরুণ। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশহিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
এই উদ্যোগের সাথে অংশ নিয়ে গতকাল ১০০ জনের মাঝে এক টাকায় ইফতার বিতরণ করেছেন তরুণ জনপ্রিয় অভিনেতা সাব্বির আহম্মেদ। এ নিয়ে তিনি বিভিন্ন মহলে প্রশংসায় ভাসছেন।
এসম্পর্কে অভিনেতা সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ‘একটি ফেসবুক গ্রুপের (করোনা যোদ্ধা মাগুরা) সদস্যরা এই রজমাস মাস জুড়ে মাগুরা শহরের বিভিন্ন স্থানে এক টাকার বিনিময়ে ইফতার বিক্রয়ের যে কর্মসুচি পরিচালিত করছে তা আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে। এ কারনে আমি তাদেরকে উৎসাহিত করতে আর্থিক ভাবে সহযোগীতা করেছি এবং আজকের ইফতার বিক্রয় কার্যক্রমে অংশ গ্রহন করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মাগুরার সন্তান এ কারণে মাগুরার যে কোন ভাল কাজে আমি সকলের পাশে থাকার চেষ্টা করি। ফেসবুকে মাগুরা করোনাযোদ্ধা নামে সংগঠনের ব্যানারে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি ইফতার প্যাকেটে রয়েছে সবজি, খিচুড়ি ও মুরগির মাংস।’
অভিনেতা সাব্বির আহমেদের বাবা মাগুরা জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি ও মাগুরা টেক্সটাইল মিলের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফারুকুল ইসলাম এবং তার মা শাহানাজ পারভীন নিজ হাতে মাগুরা মোহাম্মদপুর থানার অন্তর্গত গোপালপুর গ্রাম ও ধোয়াল গ্রামে এক শতাধিকের বেশি পরিবারে ঈদ উপহার হিসেবে শাড়ী ও লুঙ্গির সাথে নগদ টাকা বিতরন করেছেন। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও তারা সমাজের অসহায় দুস্থ মানুষকে যাকাত প্রদান করছেন। এছাড়া গোপালপুরে ৫ টাকা ও ১০ টাকা সদায়ে নিম্ন আয়ের মানুষকে বিভিন্ন আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছেন। এসবের জন্য ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন সাব্বিরসহ তার পরিবার।
এদিকে এক টাকায় ইফতার কার্যক্রমের মূল পরিকল্পনাকারী ঢাকাস্থ মাগুরা সদর উপজেলা সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসিফ হাসান শাকিল, উদ্যোক্তা হ্যাপি খান, মাগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মীর মেহেদী হাসান রুবেল সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
তারা জানান, ‘কোন নিম্নবিত্ত কিংবা অসহায় মানুষের হাতে বিনা টাকায় খাবার তুলে দিলে, সেটাকে মানুষ ত্রান হিসেবে দেখে। কিন্তু আপনি কোন জিনিস টাকা দিয়ে কিনে নিলে সেটাকে ত্রান বলা যায়না। এটি সামাজিক কাজের একটি অংশ। কিন্ত এই এক টাকার ইফতারকে যেন কেউ ত্রাণ বা দয়া মনে না করে, তাই এর নুন্যতম একটি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এই ইফতার যে নিচ্ছেন তিনি কিনেই নিচ্ছেন। এর ফলে যেটা হয়েছে অনেক নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ যারা হয়তো খাবার বা সহযোগিতার জন্য লাইনে দাঁড়াতে পারেন না, তারাও সম্মানের সঙ্গে এক টাকার এ ইফতার কিনতে পারছেন।’